বাচ্চাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেওয়ার সময় যে দিক গুলো মাথায় রাখতে হবে।

 বাচ্চাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেওয়ার সময় যে দিক গুলো মাথায় রাখতে হবে।


আমাদের মানতেই হবে যে কম্পিউটার আর ডিজিটাল ডিভাইস  ছাড়া আজকাল শহুরে মানুষের জীবন অচল৷ আধুনিক বিশ্বে, আমাদের শিশুদেরও পেয়ে বসেছে কম্পিউটারের নেশায়৷ আর অনেক নেতিবাচক প্রভাবও এর রয়েছে।


বাচ্চাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেওয়ার সময় যে দিক গুলো মাথায় রাখতে হবে।
Cyber Addiction



তথ্য প্রযুক্তির এই বিপ্লবের মধ্যেই  অভিবাবকদের অন্যতম বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে ছেলে-মেয়েদের মোবাইল ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটার ব্যবহারে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি। সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহারের অভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনার ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের কেন এত বেগ পেতে হচ্ছে? একটা মজার তথ্য দেই আপনাদের। গবেষণার ওপর ভিত্তি করে পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে যে, বাচ্চারা এমনকি চিনি বা মিষ্টির চাইতেও এইসব গ্যাজেটে বেশি পছন্দ করছে। ব্রিটিশ শিশুরা তো বাইরে খেলাধুলার চাইতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে।

শিশুরা ঠিক মত ডিম দুধ , শাকসবজি খেল কিনা, সময়মতো ঘুমতে গেল কিনা কিংবা ঠিকঠাক হোমওয়ার্ক করলো কিনা এসব দেখাই ছিল এক সময়ে বাবা-মায়েদের কাজ। আর এখন প্রযুক্তিগত দিকে তথা স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার আসক্তির তদারকিটা হয়েছে এ সময়ের বাবামায়ের কাজের অতিরিক্ত অংশ। আবার আজকাল দেখি শিশুদের সামান্য বায়না মেটাতে বাবা-মা  তাদের আদরের সন্তানের হাতে তুলে দেয় কম্পিউটার মাউস।অনেক সময় কান্না থামাতে বাসার পিসিতে ভিডিও গেইম বা কার্টুন এর সামনে বসিয়ে দেয়।আপনিও কি আপনার সন্তানের অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত? তবে আপনিও সোনামনি শিশুর হাতে কম্পিউটার মাউস ধরিয়ে দিয়েছেন তো? না দিয়ে থাকলে ,এখনই দেবেন কিনা এ নিয়ে নিশ্চয় উদ্বিগ্ন ?

চলুন আজকে কথা বলি, বাচ্চা দের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেওয়ার সময় কি কি দিক মাথায় রাখতে হবে তা নিয়ে।

 

 

 

 

ইন্টারনেটে শিশুরা কি কি দেখতে পারবে সে বিষয় সম্পর্কে তাদেরকে বোঝাতে হবে।

যদি ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই, অবশ্যই, সারা বিশ্ব তার হাতের মুঠোয়। সারা বিশ্বের ভাল জিনিসগুলোর পাশাপাশি  সারা বিশ্বের খারাপ জিনিসগুলোর প্রতিও তার আগ্রহ জন্ম নিতেই পারে।তাই আমাদের সব সময় খেয়াল রাখতে হবে আমাদের আদরের ছেলে বা মেয়ে কোন ভুল পথে পা বাড়ালো কিনা।আমরা বড়রা চাইলেই ভালো খারাপ জিনিস গুলো সহজে ফিল্টার করতে পারি।পিতামাতারা যদি তার সন্তানের ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় একটা গন্ডি না দিয়ে দিতে পারে তার পরিনাম হবে ভয়াবহ।আজাকাল টিভি, নিউজপেপারে এসব নিয়ে খবর দেখছি অহরহ।

সময় বেধে দিতে হবে যে, বাচ্চারা কতটা সময় এসব মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার দেখতে পারবে।

সার্বক্ষনিক প্রতিযোগীতায় লিপ্ত এই সমাজের অনেক অভিভাবক মনে করেন তার সন্তানটি সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকলে হয়তো বড় হয়ে একজন প্রোগ্রামার কিংবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। আসলেই কি তাই? কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন তো সে কম্পিউটারে আসলেই কি কোন শিক্ষামূলক কিছু করছে নাকি অযথা সিনেমা দেখে, গেমস খেলে সময় নষ্ট করছে। একটি শিশু যদি সর্বক্ষণ পরিবারের মানুষদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেখে, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তার সেই জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে।তাই তাদের সামনে এইসব ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার আগে আমাদের কয়েকবার ভেবে  দেখতে হবে ।বাচ্চারাও  যাতে অযথা সময় নষ্ট না করে সেজন্য ভালোভাবে এর পরিনাম বুঝাতে হবে।

বাচ্চাদের শারীরিক ক্ষতি সহ মানসিক অবস্থার দিকে খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমাদের।

আপনার সন্তানের কম্পিউটার আসক্তি তাকে স্থুলকায় করে তুলতে পারে। পাশাপাশি কম্পিউটার সিনড্রম এর কথা জানেন নিশ্চয়? যেমন চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথা ব্যথা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি ।আর  এর প্রভাবে আপনার সন্তানের লেখাপড়ার অবস্থা কি হবে তা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবেনা।বেশিরভাগ সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় তাদের। এমনকি আমাদের বাচ্চাদের আচরনগত অনেক পরিবর্তন ঘটতে পারে দীর্ঘক্ষন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার কারনে।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে তাদের উৎসাহ দিতে হবে।

হ্যা, আজকাল বলতে গেলে অনেক শিশুদের  পিতামাতাই প্রচণ্ড ফেসবুক আসক্ত। তাছাড়া টুইটার, ইনস্টাগ্রাম সহ আরো অনেক সোসাল মিডিয়া তো আছে।এক্ষেত্রে আমাদের সন্তানদেরকে সঠিক গাইডলাইন দেওয়া দরকার। তারা যেন এসব মিডিয়া তে তাদের বন্ধুদের সাথে একটা পজিটিভ ওয়ে তে কমিউনিকেট করতে পারে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করার ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন করা দরকার।

কোনো কিছুতে ক্লিক করার আগে যেন তারা ভেবে দেখে যে সে কী দেখতে যাচ্ছে, আমাদের বাচ্চাদের শেখাতে হবে এটা।

স্ক্রল করতে করতে অনেক সময় আমাদের চোখের সামনে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখি। বাচ্চারা না বুঝেই ক্লিক করে বিভিন্ন ফাদে পড়ে যায়।এডাল্ট সাইট, জুয়ার সাইট সহ ইন্টারনেটের খারাপ দুনিয়া থেকে তাদের সেইভ করতে হলে ভালো সচেতনতা তৈরি করতে হবে।সাধারণত কেউ যদি অনলাইনে কোন খারাপ সাইটে যায় তাহলে সেই কম্পিউটার ব্যবহারকারী অনাকাংখিত ও চটকদার বিজ্ঞাপনের সম্মুখীন হতে পারেন। ইন্টারনেট এর সব খারাপ দুনিয়ার সাথে যদি ছোট থেকেই পরিচিত হয়ে যায় তাহলে কৈশোর অথবা যৌবনে সে বেপরয়া হয়ে উঠতে পারে।কোন কিছুতে ক্লিক করার আগে সেটা  কিভাবে এনালাইসিস করতে হয় তা শেখাতে হবে আমাদের বাচ্চাদের  ।

অযাচিত বিষয় দেখায় সীমাবদ্ধতা আনতে প্রযুক্তিগত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

যেমন নতুন নতুন সমস্যা আমরা ফেস করছি তেমন তার জন্য বিভিন্ন স্মার্ট সমাধানও প্রতিনিয়ত খুজে বের করছে প্রযুক্তিবীদেরা ।ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার সহ আপনার পিসির ব্রাউজার এর কিছু সুবিধা আপনি কাজে লাগাতে পারেন যাতে অযাচিত সাইট গুলো আপনার সন্তানের কাছে না আসে। অটোমেটিক ওয়েতে কিছু খারাপ সাইট আপনার ব্রাউজার থেকে ব্লক করতে পারবেন।অনেক ফ্রী সফটওয়্যার এর সাহায্য নিতে পারেন ।

 

 

একটা কথা বলে শেষ করবো।অনেক পিতামাতা ভাবেন, আহা হামাগুড়ি দেওয়া শিশুকে যদি কম্পিউটার এর সামনে বসানো যেত তাইলে অনেক আগে ভাগেই শিখে ফেলতো সব।  আপনার দোলনার বাচ্চাটার হাতে মাউস ধরিয়ে দেওয়ার আগে চিন্তা করুন আসলেই কি লাভ হচ্ছে এতে।মূল কথা হলো,, সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রযুক্তি পণ্য থেকে দূরে রাখা উচিত কিংবা সীমিত করা জরুরি। বিশেষত, শিশু ও কৈশোরের সংবেদনশীল সময়ে তাদের বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

Main post : শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে যে দিকগুলো খেয়াল রাখবেন (risingbd.com)


Hridoy Kumar Paul
 Email: hridoy.just17@gmail.com 
Jashore University of Science and Technology

No comments

Theme images by TayaCho. Powered by Blogger.