নতুন ই-কমার্স সাইট -সম্ভাবনার হাতছানি : ক্রেতাদের আস্থা অনাস্থা
ই-কমার্স বলতে অনলাইন বেচা-কেনা বা অনলাইন বাজার বুঝানো হয়। যেমন, আপনার কাছে একটি নতুন বা পুরাতন মোবাইল বা কম্পিউটার আছে অথবা অন্য যে কোন পণ্য যা অনলাইনে বিক্রয়যোগ্য বলে আপনার মনে হয়। নির্দিষ্ট কোন একটি ওয়েবসাইটে সেই পণ্যটির বিবরণ সহ ছবি বা ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে পণ্যটি বিক্রয় করাকে অনলাইন ব্যবসা বা ইন্টারনেট বিপণন সিস্টেম বুঝানো হয়। এবং যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্যটিকে ক্রেতার সামনে তুলে ধরা হয় সেই ওয়েবসাইট'কে ই-কমার্স সাইট বলা হয়।
ই-কমার্সের
এই ধারণাটি অনেক পুরাতন হলেও ১৯৯১ সাল থেকে ই-কমার্স বাণিজ্যিক ভাবে চালু করা হয়েছিল।
তবে ১৯৯৪ সালের দিকে ইন্টারনেট অগ্রগতিতে ই-কমার্স জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে
এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে তাদের পরিষেবাগুলি
উপস্থাপন করেছিল। তখন Albertsons এবং Safeway নামের দুটি সুপারমার্কেট সফল ভাবে ই-কমার্স
শুরু করে। এবং ২০০১ সালের শেষের দিকে ই-কমার্স এর বিজনেস টু বিজনেস মডেলে প্রায় ৭০০
মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছিল।১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ই-কমার্সের বৃদ্ধির হার
যদি দেখি, তাহলে দেখা যায় ক্রমাগত ই-কমার্সের সংখ্যা বাড়তেছিল এবং বর্তমানে এই ই কমার্সের
অবস্থান কোথায় দাড়িয়েছে তা আমরা সবাই জানি ।
যাক
এসব কথা ।এবার আসি বাংলাদেশের ই-কমার্স নিয়ে ।প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন রকমের অনলাইন বাজার
এর সাথে পরিচিত হচ্ছি । এদেশেও নতুন নতুন ই-কমার্স সাইট প্রতিদিন আমাদের সামনে বিভিন্ন
রকম জমকালো অফার নিয়ে হাজির হচ্ছে । আপনি কি এসব নতুন সাইট থেকে কেনাকাটা করবেন আপনার
নিত্যদিনের পন্য? নাকি আস্থা পাচ্ছেন না নতুন এসব ই কমার্স সাইট গুলোর প্রতি ?
চলুন
আজকে এসব নিয়ে একটু আলোচনা করি, কেন আপনি নতুন ইকমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করবেন ।
ডিজিটাল
বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে বলতেই হয়। সরকারের জোরালো পদক্ষেপের
ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিজিটাল বা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন
লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে ই-কমার্স বাংলাদেশে নতুন হলেও পিছিয়ে নেই।বাংলাদেশে ই-কমার্স
খাত গতি পেতে শুরু করে ২০১৩ সাল থেকে। ওই বছর দুটি ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমত, ক্রেডিট কার্ড
দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছর দেশের
মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রিজি) চালু করে।এরপর
চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফোরজি) চালু হয়েছে। মানুষের স্মার্টফোন ব্যবহারের
প্রবণতা বেড়েছে। অন্যদিকে ই-কমার্স খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ এসেছে। সব মিলিয়ে খাতটি
বড় হয়েছে। ক্রেতা বেড়েছে।ঘরে বসেই যদি মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয় করা যায় তাহলে মানুষ কেন
আর কষ্ট করে বাজারে যাবে। সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে চলতে গেলে এরকম অনেক
কিছুই গ্রহণ করছে মানুষ।
ই-কমার্স
একটি স্মার্ট ব্যবসা সন্দেহ নেই। এখানে উন্নত গ্রাহক সেবা, গ্রাহক সন্তুষ্টি সম্পর্কে
ভালো ধারণা না থাকলে ব্যবসায় সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। নতুন ই-কমার্স সাইট গুলো গ্রাহক
সন্তুষ্টি এর বিষয়ে খুবই সচেতন থাকে । ক্রেতারা
যে জিনিসটি কেনা হচ্ছে, সেটার মান কেমন, যা বলা হয়েছে, সেটা দেখা হয়েছে কিনা, সেটা
যাচাই করে দেখে নিতে চান। নতুন কোন ই-কমার্স সাইট এর মালিক চাইবে না, সরবরাহ করার পর
ক্রেতারা অভিযোগ করুক। কারণ একটা অভিযোগ তাদের পুরো গুডউইল নষ্ট করে দিতে পারে। তাই
নতুন সাইট গুলো চায় ক্রেতারা জিনিস বুঝে পেয়ে, দেখেশুনে দাম পরিশোধ করুক।এজন্য নতুন
ই-কমার্স সাইট থেকে পন্য ক্রয় করা লাভজনক বলে মনে হয় আমার । তাছাড়া নতুন একজন উদ্যোক্তা
তার বিজনেস দাড় করানোর জন্য প্রথম প্রথম নানা ধরনের ডিসকাউন্ট দেয় । অনেক কম দামে তাদের
পন্য গুলো বিক্রয় করে। আমার মনে হয় আজকের নতুন
উদ্যোক্তা কে ভবিষ্যতের সফল বিজনেস ম্যান এ রুপান্তর করার জন্য তাদের কাছ থেকে ক্রয়
করা দরকার । কারন আমাদের এই একটু অনুপ্রেরনা ভবিষ্যতে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে।
মাত্র কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে ঘরেই চলে আসছে পণ্য এমন সুবিধা পেলে মানুষ অনলাইন মার্কেটে
ঝুঁকবে এটাই স্বাভাবিক।তবে কিছু কিছু কারনে
এদেশের মানুষ নতুন নতুন ই-কমার্স সাইট গুলোর প্রতি সম্পুর্ন আস্থা রাখতে পারছে
না। কিছু প্রতিষ্ঠান সঠিক পণ্য, সঠিক সময়ে সরবরাহ, সঠিক দাম নিশ্চিত করে না ফলে ক্রেতারা
প্রতারিত-বিড়ম্বিত হন। গত কয়েক বছরে ই-কমার্স এতো বড় হয়েছে, সেখানে সবাই মান ধরে
রাখতে পারছে না। অনেকেই যেভাবে পারছে, নিম্নমানের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। এ কারণে
মানুষও এখন অন্ধভাবে ই-কমার্স সাইটগুলোকে বিশ্বাস করছে না। অচেনা বিক্রেতা বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের
ওপর বিশ্বাসহীনতা, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা , অনলাইন
পেমেন্টে অনভ্যস্ততা ,অনাস্থা ও নিরাপত্তাহীনতা এর কারনে অনেক সময় নতুন ই-কমার্স সাইট
থেকে মানুষ পন্য কিনতে চায় না আজকাল।
ই-কমার্স
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন হলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে নতুন উদ্যোক্তারা ধিরে ধিরে
এই ই-কমার্স ব্যাবসার এর সাথে জড়িত হচ্ছেন।
বাংলাদেশে ই-কমার্স বাড়ছে খুবই
দ্রুত। ই-কমার্স ব্যবসার
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হবে এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল। কারণ বিশ্বের
সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আপনাকে অবশ্যই কোন না কোন সময় এটার দারস্ত হতে হবে।তাই এদেশের
নতুন উদ্যোক্তা দের সুযোগ দিতে হবে আমাদের ।ই-কমার্স এর মাধ্যমে আজকের ছোট ছোট উদ্যোক্তা
আগামী দিনের একজন বড় বিজনেস ম্যান হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে শেষ করছি আজকে ।
হৃদয়
কুমার পাল
শিক্ষার্থী
যশোর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments