আবার একটি ব্যস্ত সপ্তাহের অপেক্ষায় !
আবার
একটি ব্যস্ত সপ্তাহের অপেক্ষায় :
ঘুম
থেকে উঠেই ব্রাশ নিয়ে
বাথরুমে উঁকিঝুঁকি মারাছি।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিরিয়াল পেয়ে
যাই মেসের বাথরুমের।চোখেমুখে জল ছিটিয়ে রুমে
এসেই দেখলাম ৯.২০ বেজে
গেছে।রান্নাঘর থেকে যেই খাবার
নিয়ে আসি অমনি পাশের
রুম থেকে বন্ধু বলে
উঠলো "এই হৃদয় ৫
মিনিট আছে, প্রথম ক্লাস
আজকে ৯.৩০। আমি
গেলাম। " আমিও খাবার রেখে
ব্যাগ হাতে নিয়ে দিলাম
এক দৌড়।লম্বা শ্বাস নিতে নিতে চারতলায়
উঠে গেলাম ক্লাস করতে। হ্যা কয়েকটা মাস আগে
এভাবেই আমার দিনের শুরু
হতো।
পুরো
দেশ থমকে গেছে আজ।করোনা
নামের এক ভাইরাস এই
মুহুর্তে পুরো পৃথিবী অচল
করে দিয়েছে ।অদৃশ্য জীবানু মানুষের ফুসফুস দখল করে নিচ্ছে।প্রথমে
বলে নিই আমি বাংলাদেশের
একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে পড়াশোনা
করছি।২০১৭ সালের শেষের দিকে অনেক স্বপ্ন
নিয়ে ফার্মেসী বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম।লাইফ সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা আর
ইন্টারনেটে নতুন নতুন বিষয়
নিয়ে ঘাটাঘাটি করার একটা বিশেষ
ঝোক আছে আমার।সময় পেলে
সায়েন্টিফিক আর্টিকেল লিখি।থাক সেসব কথা।গত বছরের
শুরুতে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে জানতে
পেরেছিলাম চীনে এক নতুন
ভাইরাস এসেছে। তারপর সংক্রমণ শুরু হয় এদেশে।তখন
কিভাবে এক একটা দিন
কেটে যেত বুঝতেই পারতাম
না।সারাদিন এর ব্যস্ত শিডিউল
এর মাঝেও খোজ রাখতাম নতুন
ভাইরাসটির।কখনো ভাবিনি এত দ্রুত সব
কিছু পালটে যেতে পারে।মার্চ এর
মাঝামাঝি এক সপ্তাহে জানতে
পারলাম আমাদের ভার্সিটি কিছুদিন বন্ধ থাকবে।হল এবং
সব মেসগুলো বন্ধ হলো।অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি
শুরু হলো।পরেরদিনই কিছু বন্ধুদের বিদায়
দিলাম।একেক করে ছোট ছোট
ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বাড়ির জন্য
রওনা হয়েছিল সবাই।অজানা এক ভয়ে বুকের
মধ্যে একটু মোচড় দিয়ে
উঠেছিল,সবাইকে এভাবে চলে যেতে দেখে
সেদিন।আমি মেসে থাকি।মার্চ মাসের
মিলের(খাবারের) ম্যানেজার
ছিলাম। খাবার এবং ওই মাসের
টাকাপয়সার হিসাব ছিলো আমার কাছে।তাই
মেস ছেড়ে আসতে আমার
দুইদিন দেরি হয়।এখনো মনে
আছে, আসার আগে মেসেঞ্জার
গ্রুপে আমাদের মিল(খাবার) বন্ধের
নোটিশ দিয়েছিলাম আমি।তারপর কয়েক দফায় ছুটি
বেড়েছে। এখন প্রায় ১০
মাস ধরে বাড়িতেই আছি।গ্রামের
মধ্যে ছোট্ট টিনের ঘর। এবারই মনে
হয় এতটা সময় ধরে
আমি মায়ের হাতে রান্না করা
খাবার খাচ্ছি তিনবেলা।সেই ২০১৫ সাল থেকে
মেসে থাকার অভ্যাস আমার।মাঝে মাঝে খুব মন
খারাপ হয়।অনেকদিন হয়ে গেছে আমার
ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না।
এইতো সেদিনও এক বন্ধুর জন্মদিন
ছিলো, ফেসবুকে উইশ করেছে সব
বন্ধুরা।চাইলেই এখন সবাই ক্যাম্পাসের
মাঠে হৈহুল্লোড় করতে পারি না।ল্যাব,
ক্লাস টেস্ট আর এসাইনমেন্ট নিয়ে
কখনো কখনো পুরো সপ্তাহে
ব্যস্ততা লেগে যেতো। তারপর
বিভিন্ন সেমিনার আর প্রোগ্রাম তো
ছিলোই।যখন মন খারাপ হতো,
মেসের ছাদে যেতাম।আবার একাএকা
ভার্সিটির মাঠে হেটে বেড়াতাম।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
ব্যস্ত শিডিউল কিন্তু ঘুমানোর কোন রুটিন ছিলনা
তখন।রাত হলেই ভবিষ্যৎ নিয়ে সিরিয়াস হতাম।প্রতিদিন
একাডেমিক পড়ালেখার
নতুন নতুন প্লান করেছি।এখন
আর এসব ঝামেলা নাই।ছোটখাট
বাড়ির কাজ করি,বইপড়ি,টিভি দেখি,ঘুমাই
আর এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে
। খোলা আকাশের নিচে
বসি মাঝে মাঝে।বিকেলে নদীর
পাড়ে শীতল হাওয়া খাই
আর গান শুনি।আর হ্যা
বেশি লোকের মধ্যে গেলেই একটা সার্জিক্যাল মাস্ক
পরি আমি।ছোটখাট স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা করছি।ডিজাইনিং করা শিখেছি। মোবাইল নেটওয়ার্ক এর অবস্থা খুব
খারাপ গ্রামে,এটা সবাই জানে।অনলাইন
ক্লাস করছি তবুও ।ইন্টারনেট অসুবিধার জন্য বাড়ির
উঠানে বসে ক্লাস করি প্রায় সময়।।সুযোগ
পেলেই গ্রামের মানুষদের ভাইরাস ,ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে কিছুটা জ্ঞান
দিই।অনেকে বুঝতে চায়না।অনেকে দেখি নাকের
কাছে একটা কাপড়ের মাস্ক
ঝুলিয়ে সুপারম্যান এর মত উড়ে
বেড়ায়।কিন্তু রোগ সারাতে বিভিন্ন
ঔষুদের সঠিক ব্যবহার নিয়ে
তাদের একটু পরামর্শ দিতে
পারলে আমি খুশি হই
।লকডাউন শিথিল হওয়ার পর পরিস্থিতিতে পালটে
যাচ্ছে। এখন মাস্ক পরলে
হা করে আমার দিকে
তাকিয়ে থাকে অনেকে।আমি অপেক্ষা
করি ,কখন এই আধার
কেটে যাবে।সুস্থ্য হয়ে উঠবে এই
পৃথিবী কারন এখনো মধ্যবিত্তের
অনেক স্বপ্ন পুরোন বাকি।দিনেদিনে অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠছে।এই লকডাউন
এর পরিস্থিতিতে আমাদের সবার মনের অবস্থা
ভালো নেই।ধৈর্য্যহারা হয়ে যাচ্ছি অনেকে।ভার্সিটির
সেই চায়ের আড্ডায় মন টানছে।ইচ্ছে করে
ভার্সিটির পাশের ওই সরু রাস্তা
দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে দাপিয়ে বেড়াই।মাঝরাতে
হঠাত একা কাপ ধোয়া
ওঠা লাল চা খেতে
ইচ্ছে করে।সেইসাথে প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের ওই
খোলা মাঠে গোল হয়ে
বসার শখ হয়।মনকে শ্বান্তনা
দিই।এই মহামারীতে কত মানুষ মারা
যাচ্ছে।আমি বেচে আছি।বুক ভরে
নিঃশ্বাস নিচ্ছি।এটাই তো আনন্দ।আবার একটি
ব্যস্ত সপ্তাহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আমরা একদিন করোনা
নামের এই ছোট ভাইরাস
এর সাথে মানিয়ে চলতে
শিখে যাবো।এই আধার কেটে গিয়ে
একদিন আলো আসবেই। সৃষ্টিকর্তা
এই মুহুর্তে আমাদের আরো ধৈর্য দান
করুক। যুগেযুগে বহু কিংবদন্তি ভাইরাস
ব্যাক্টেরিয়া এসেছে এই গ্রহে।এত সুযোগ
সুবিধা তখন ছিলনা। বহু
মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে ।এখন আমরা একবিংশ
শতাব্দী তে বাস করি।
তাই জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে
হবে পৃথিবীর প্রতিটি কোনায়।
হৃদয়
কুমার পাল
শিক্ষার্থী
বি.
ফার্ম (প্রফেশনাল) -৩য় বর্ষ
ফার্মেসী
বিভাগ
যশোর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
hridoy
ReplyDelete